/ সুন্দরবনে জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের প্রবেশে আজ থেকে তিনমাসের নিষেধাজ্ঞা

সুন্দরবনে জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের প্রবেশে আজ থেকে তিনমাসের নিষেধাজ্ঞা

#মাছ ও কাঁকড়ার প্রজনন রক্ষায় কঠোর নজরদারি

বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়ার প্রজননকাল রক্ষায় তিনমাসের জন্য জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। আজ ১ জুন থেকে শুরু হয়ে এই নিষেধাজ্ঞা চলবে আগস্ট মাস পর্যন্ত। ফলে পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের ১২ হাজার বিএলসি (বোট লাইসেন্স সনদ)ধারী জেলে এবং তাদের সহযোগী জেলেরা মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করতে পারবেন না। একইসাথে মধু আহরণ থেকেও বিরত থাকতে হবে মৌয়ালদের।
পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মোঃ শরিফুল ইসলাম জানান, বর্ষা মৌসুমে সুন্দরবনের নদী-খালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন ঘটে। মাছ ও কাঁকড়ার প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে জুন-জুলাই-আগস্ট এই তিন মাস মাছ ও কাঁকড়া আহরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, বনবিভাগ ইতিমধ্যে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয়দের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে সচেতন করছে এবং টহল জোরদার করা হয়েছে।
বনবিভাগের সূত্র থেকে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার সময়সীমায় সুন্দরবনের অভ্যন্তর দিয়ে বৈধ রুটে নৌযান চলাচল চালু থাকবে, তবে কোনো নৌযান মাছ, কাঁকড়া শিকার বা মধু আহরণের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। শুধু যাত্রীবাহী নৌযান এবং অনুমোদিত পণ্যবাহী জাহাজ চলাচল করবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সুন্দরবন বাংলাদেশের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের ভাÐার। এখানে নদী-খালে রূপচাঁদা, পারশা, ভেটকি, কোরাল, চিংড়ি, কাঁকড়া, শাপলা পাতা ইত্যাদি মাছের প্রজাতি প্রজনন করে। বর্ষাকালে নদীর পানি মিষ্টি হয়ে ওঠায় এই প্রজননকাল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে মাছ ও কাঁকড়া আহরণ বন্ধ না রাখলে মাছের বংশবিস্তার হুমকির মুখে পড়তে পারে এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার জেলে, বাওয়ালী ও মৌয়ালরা মূলত মাছ, কাঁকড়া, মধু আহরণ ও কাঠ সংগ্রহের ওপর নির্ভরশীল। বর্ষাকালে এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে যায়। তবে বন বিভাগ ও সরকার স্থানীয়দের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান ও আর্থিক সহায়তা কর্মসূচি গ্রহণ করছে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, এই তিনমাসের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে সুন্দরবনের প্রতিটি প্রবেশপথ ও নদীখালে টহল জোরদার করা হবে। বনপ্রহরী, পুলিশ, কোস্টগার্ড এবং স্থানীয় প্রশাসন যৌথভাবে অভিযান চালাবে।
বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, পূর্বের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা চলাকালে চোরাকারবারি ও অবৈধ শিকারকারীরা মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করতে পারে। তাই এবছর শুরু থেকে টহল ও নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় স্থানীয় জনগণকেও সচেতন হওয়ার আহŸান জানানো হয়েছে।