কেএনএফের ৩০ হাজার ইউনিফর্ম :
নিশ্চয়ই এটা ভালো কোনো খবর নয়
সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের বিপরীতে দাঁড়ায়নি এবং একসঙ্গে কাজ করছে বলে সেনাসদর জানিয়েছে। আজ সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছে সেনাসদর।
ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স মেসে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনসের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা এবং সেনাসদরের মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম।
মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডর দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের নিরাপত্তা বিঘিœত হয়, এমন কোনো কাজে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।’
করিডর নিয়ে সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘যেভাবে কথা আসছে যে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর বিশাল মতপার্থক্য হয়েছে, বিভেদ রয়েছে, মিডিয়াতে বিষয়টি যেভাবে আসছে, এ রকম আসলেই কিছু হয়নি। আমরা একে অপরের সঙ্গে সমঝোতার মাধ্যমে সুন্দরভাবে কাজ করছি। এটা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই।’
বিষয়গুলো জটিলভাবে চিন্তা না করে সহজভাবে ভাবার আহŸান জানিয়ে নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, ‘আমরা যেন বিষয়টিকে এমনভাবে না দেখি যে সরকার ও সেনাবাহিনী ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করছে এবং একে অপরের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কখনোই নয়। সরকার ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করছে। ভবিষ্যতেও আমরা একসঙ্গে কাজ করে যাব বলে সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’
সেনাসদর আরও জানায়, গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এ ছাড়াও গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
সেনাসদরের ব্রিফিংয়ে আরও বলা হয়, বিগত ৪০ দিনে যৌথ অভিযানে ৪৮৭ জন মাদক ব্যবসায়ী এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, অবৈধ মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে, যার মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।
ঈদুল আজহার সময় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল যানবাহন চলাচল নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ঈদের আগে ও পরে মিলে দুই সপ্তাহের বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে জাতীয় মহাসড়কগুলোয় নির্বিঘেœ যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকাসহ দেশের গুরত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও মহাসড়কে দিন-রাত টহল পরিচালনা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পর্শকাতর স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনসহ টিকিট কালোবাজারি বা বেশি দামে টিকিট বিক্রি রোধ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এসব কার্যক্রম ঈদুল ফিতরের মতোই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। একই সঙ্গে জনসাধারণকে নির্বিঘেœ ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানোসহ পরিবার-পরিজনের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দঘনভাবে ঈদ উদ্যাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
কোরবানির পশুর হাটে চাঁদাবাজি ও নিরাপত্তা বিধান নিয়ে ব্রিফিংয়ে বলা হয়, ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজ ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়, মূল সড়কের পাশে পশুর হাটের অবস্থান হওয়ায় রাস্তাঘাটে যানজটের সৃষ্টি হয়। যার ফলে জনসাধারণের মাঝে দুর্ভোগ ও জানমালের নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি হয়। সেনাবাহিনী নিয়মিত টহল ও বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে পশুর হাটে চাঁদাবাজি ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সচেষ্ট থাকবে।
এদিকে, পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ৩০ হাজার ইউনিফর্ম বানানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে সেনাবাহিনী।
সোমবার (২৬ মে) দুপুরে সেনা সদরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উল-দৌলা।
চট্টগ্রামের একটি কারখানায় সন্ত্রাসী সংগঠন কেএনএফের পোশাক পাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশন্সের পরিচালক বলেন, ‘কেএনএফ মূলত বম কমিউনিটিভিত্তিক সংগঠন। পোশাক পাওয়ার সংবাদটি একটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ। সংগঠনটির অস্ত্রের ব্যবহার আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামে দেখছি। তাদের আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনা সদস্য মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আহত হয়েছেন। সেই প্রেক্ষাপটে নিশ্চয়ই এটা ভালো কোনো খবর নয়।’
তিনি বলেন, ‘৩০ হাজার ইউনিফর্ম পাওয়ার ছবি দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, এটার আসলে ব্যাপারটা কী, এ বিষয়ে আমাদের জানতে হবে। এ পোশাক কাদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, সেটা আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। এটা নিয়ে কাজ চলছে। এ সংগঠনের সঙ্গে অন্যদের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। কিন্তু বম কমিউনিটির জনসংখ্যা মাত্র ১২ হাজার। সুতরাং এই ৩০ হাজার ইউনিফর্ম কেএনএফের জন্য ছিল কি না সেটা খুঁজে দেখার সুযোগ আছে। এ বিষয়টি আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। বিষয়টি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিষয়টিকে আমরা হালকাভাবে নিইনি, নিশ্চিত করে বলতে পারি। এ ব্যাপারে যতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, আমাদের দায়িত্বের মধ্যে যেটা পড়ে, সেটা আমরা করব।’