ধানের দেশ জাপানে চাল সংকট চলছে। এ জন্য আমদানির পথে হাঁটছে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম এই দেশ। এমন পরিস্থিতিতে উত্তাল সূর্যোদয়ের দেশটি। আর সেই দেশেই চাল কেনা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন জাপানের কৃষিমন্ত্রী তাকু ইতো।
আজ বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি ও ব্রিটিশ গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। এই সংকটময় অবস্থায় তাকু ইতো মন্তব্য করেন, ‘আমি কখনো চাল কিনি না। কারণ আমি তা বিনামূল্যে পাই।’ তার এই বিতর্কিত মন্তব্য জাপানিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
এই ক্ষোভের জেরেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন ইতো। জাপানে নিত্যপণ্য, বিশেষত খাবারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। চালসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের বাড়তি দামে বিরক্ত ক্রেতারা। জনমত জরিপে জনপ্রিয়তা কমছে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সরকারের।
মূলত মন্ত্রীর পদে থেকে তার ওই মন্তব্যে ভোটার ও আইনপ্রণেতাদের মধ্যে যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে তা প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার নেতৃত্বাধীন সংকটাপন্ন সরকারের জন্য নতুন চাপ তৈরি করেছে। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গত সপ্তাহান্তে একটি তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে কৃষিমন্ত্রী তাকু এতো চাল নিয়ে ওই বিতর্কিত মন্তব্য করেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমাকে কখনও চাল কিনতে হয়নি, কারণ সমর্থকেরা উপহার হিসেবে চাল দেন।”
এই মন্তব্য সামনে আসার পর থেকেই ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। বর্তমানে জাপানে চালের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে—ফসলের কম ফলন এবং পর্যটন চাঙ্গা হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়ে যাওয়াই এর পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে। ফলে এমন সময় জনগণের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে এতো’র মন্তব্যকে ‘সংবেদনশীলতার অভাব’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। পদত্যাগের সময় এতো বলেন, “চালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে নাগরিকরা যেখানে কষ্ট পাচ্ছেন, সেখানে আমি খুবই অনুপযুক্ত মন্তব্য করেছি।” জাপানের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তাকু এতো পদত্যাগ করায় এখন সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শিনজিরো কোইজুমি এতো’র জায়গায় নতুন কৃষিমন্ত্রী হতে পারেন।
রয়টার্স বলছে, গত এক বছরে জাপানে চালের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রাস্ফীতির চেয়ে দাম কমার অভ্যস্ত জনগণের জন্য বড় ধাক্কা। নাগরিকদের আয় এখনও মূল্যস্ফীতির সাথে খাপ খাচ্ছে না, ফলে দৈনন্দিন ব্যয় বাড়ছে। পূর্ব এশিয়ার এই দেশটির সরকার চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে জরুরি মজুত থেকে চাল বাজারে ছাড়া শুরু করলেও এতে তেমন সুফল মেলেনি। এদিকে চাল নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের পরও প্রথমে এতোকে বরখাস্ত করতে অস্বীকার করায় প্রধানমন্ত্রী ইশিবাও সমালোচনার মুখে পড়েন। বিরোধী দলগুলো তখন পার্লামেন্টে এতো’র বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল। শেষমেষ ইশিবা এতো’র পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে বলেন, “এই নিয়োগের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিচ্ছি”। তবে নতুন কৃষিমন্ত্রী কে হবেন, সে সিদ্ধান্ত এখনো নেননি বলেও জানান তিনি।
মূলত কৃষিমন্ত্রীর এই পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী ইশিবার জন্য বড় ধাক্কা, কারণ আগামী জুলাই মাসে জাপানের উচ্চকক্ষের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে গত বছরের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত আগাম নির্বাচনে তার লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) এবং জোটসঙ্গী কোমেইতো নিম্নকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।
গত রোববার প্রকাশিত কিওডো নিউজের এক জরিপে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ইশিবার জনপ্রিয়তা সর্বনিম্ন ২৭.৪ শতাংশে নেমে গেছে। পাশাপাশি চালের দাম নিয়ে সরকারের পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট বলে মত দিয়েছেন ৯০ শতাংশের কাছাকাছি ভোটার।