দৃশ্যটি যেন এক নির্মম বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি একজন মধ্যবয়সী নারী রাস্তায় পড়ে আছেন নিঃসঙ্গ, অসুস্থ ও রক্তাক্ত অবস্থায়। নাম তাসলিমা খাতুন, বয়স আনুমানিক ৫০। তিনি শুয়ে ছিলেন খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার ‘স্বপ্ন’ সুপারশপের সামনে। তার পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলেন অনেকেই। কেউ তাকিয়েছেন করুণ চোখে, কেউ এড়িয়ে গেছেন দূরত্ব রেখে। কিন্তু এগিয়ে এসেছিলেন ‘স্বপ্ন’ আউটলেটের সাধারণ কয়েকজন কর্মী যাঁরা দেখেছেন তাসলিমাকে মানুষ হিসেবে।
২ জুলাই দুপুরে আউটলেটের কর্মীরা তাসলিমার অসুস্থতা দেখে প্রথমে তাঁকে পানি, জুস ও খাবার দেন। পরক্ষণেই নজরে পড়ে তাঁর মাথায় গুরুতর ক্ষতের চিহ্ন, যেখানে পোকা জমে যাওয়ার মতো অবস্থা।
সঙ্গে সঙ্গে খবর যায় ‘স্বপ্ন’-র কর্পোরেট দপ্তরে। হেড অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন মো. মাসুম বিল্লাহ দ্রুত ব্যবস্থা নেন। তিনি বলেন “বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের এমডি স্যারকে অবহিত করি। এরপর তাঁর নির্দেশে তাসলিমাকে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
পরদিন ৪ জুলাই থেকে তাসলিমা খাতুনের চিকিৎসা শুরু হয় খুলনার একটি হাসপাতালে। প্রয়োজনীয় ওষুধ, সেবা ও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছে ‘স্বপ্ন’।
‘স্বপ্ন’-র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির বলেন“আমরা ব্যবসা করি, কিন্তু মানবতাকে বিসর্জন দিই না। একজন মা অসহায় অবস্থায় রাস্তায় পড়ে থাকবেন—এটা আমাদের বিবেককে কাঁদায়। তাঁর পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব মনে করেছি।”
তিনি আরও বলেন,“এই নারীর মাথায় কীভাবে এমন আঘাত এলো, সেটা জানা জরুরি। আমি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে।”
এই ঘটনায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা ছিল উল্লেখযোগ্য। ‘স্বপ্ন’ কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেছে “মানবিক সংকটে যে এগিয়ে আসে, সে-ই প্রকৃত রাষ্ট্রপ্রেমিক। তাঁদের সহযোগিতা না পেলে হয়তো এত দ্রুত তাসলিমার পাশে দাঁড়ানো সম্ভব হতো না।”
কে তাসলিমা? কোথা থেকে এসেছেন? পরিবার আছে কি? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। কিন্তু এই সমাজে তিনি একার না এটা প্রমাণ করেছে খুলনার কিছু তরুণ কর্মীর ভালোবাসা, করপোরেট কাঠামোর মানবিক প্রয়োগ।