অভিমান, প্রেমে, পড়াশোনার চাপ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও মানসিক অস্থিতায় গত দুই মাসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে ১৯টি আত্মহননের ঘটনা ঘটেছে। সবশেষ গত ৪৮ ঘণ্টায় (২০ থেকে ২২ জুন) উপজেলায় আত্মহত্যা করেছেন আরো দুইজন। বাঞ্ছারামপুর থানা সূ্ত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, আত্মহত্যাকারী ২১ জনের মধ্যে ১২ জন নারী।বাকি সাতজন পুরুষ। গত দুই মাসে আত্মহত্যাকারীদের ৪৬.১ শতাংশই মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী। আর ছাত্রীদের মধ্যে আত্মহননের প্রবণতা বেশি। এ হার ৬১ শতাংশ।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নাইমুর রহমান বলেন, অনিয়ন্ত্রিত আবেগ ও তুলনামূলক দুর্বল মানসিক স্থিতিশীলতার কারণে মেয়ে শিক্ষার্থীরা সহজে হতাশায় ডুবে এ পথে পা বাড়াচ্ছে। অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘সফলতা উদ্যাপন করা হলেও ব্যর্থতাকে সামাল দেওয়ার বিষয়টি সমাজে শেখানো হয় না।’ তিনি সন্তানের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নজর দিতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।তিনি বলেন, ‘একটি পরিবার একটি বটগাছের মতো। সেই গাছের একটি ডাল ভেঙে গেলে যেমন পুরো গাছে তার প্রভাব পড়ে, তেমনি পরিবারের একজন হারিয়ে গেলে পুরো পরিবারই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এটি শুধু ব্যক্তিগত নয়, সামগ্রিক এক শোক ও চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একটি জীবন হারিয়ে গেলে, শুধুই এক ব্যক্তি নয়, ভেঙে পড়ে একটি পরিবার, কেঁপে ওঠে একটি সমাজ।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌস আরা বলেন, ’আমরা আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে যতটা স্বপ্ন দেখি, ততটাই দায়বদ্ধ হতে হবে সেই স্বপ্নের সুরক্ষায়ও।’ তিনি বলেন, ‘আজকের তরুণরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কিন্তু প্রেমের নামে একধরনের বেপরোয়া মোহ এবং আবেগের বশবর্তী হয়ে তারা নিজেরাই নিজের ভবিষ্যৎকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এটি কেবল একটি ব্যক্তিগত সমস্যা নয়, এটি এখন একটি বড় সামাজিক সংকট। এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের তিনটি স্তম্ভ- পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজকে একযোগে কাজ করতে হবে।
‘ তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমত, অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান থাকবে, সন্তানদের সময় দিন, তাদের মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কাদের সঙ্গে মিশছে, কী নিয়ে ভাবছে- এসব জানতে বন্ধুর মতো পাশে থাকুন।’