গত কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে বরগুনার বেতাগী পৌরসভা ও আশপাশের নিম্নাঞ্চলগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতা। এতে শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকের ঘরে পানি ঢুকে পড়ায় রান্না-বান্না, চলাচল ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পৌর এলাকার ১, ২, ৩, ৪, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডসহ কাজিরাবাদ, হোসনাবাদ, বটতলা, ছোট মোকামিয়া, বুড়ামজুমদার, মোল্লার হাট ও সরিষামুড়ি গ্রামের বেশিরভাগ এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর পর্যন্ত পানি জমে আছে। অনেক বাড়িতে রান্নাঘর ও টয়লেট পানির নিচে চলে গেছে।
“আমাদের রান্না করার মতোও অবস্থা নেই। পানি উঠে গেছে বিছানায়। কোথাও যেতে পারি না। চারদিকে শুধু পানি আর পানি,” বলেন কাজিরাবাদ এলাকার এক নারী বাসিন্দা।
বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌরসভার ছোট ছোট খাল ও ড্রেনগুলো দিয়ে পানি সঠিকভাবে নিষ্কাশিত না হওয়ায় জলাবদ্ধতা আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। অনেক জায়গায় ড্রেন ও খাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পানি উপচে পড়ছে রাস্তায়, বসতঘরে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, সুপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাবে প্রতিবছরই বেতাগীতে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। কিন্তু এবার টানা বর্ষণে পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করেছে।
বেতাগী পৌরসভার মাছ ও সবজি বাজার এলাকাও জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত। জোয়ারের সময় বিষখালী নদীর পানি বাজারে ঢুকে পড়ে এবং ভাটার সময় সরে গেলেও তার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে।
বেতাগী বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক সায়েদ মল্লিক বলেন, “জোয়ার এলেই বাজার পানিতে তলিয়ে যায়। আমরা হাঁটু পানির মধ্যে বসে ব্যবসা করি। মাছ, সবজি সব নষ্ট হয়ে যায়।”
বেতাগী পৌর প্রশাসক মো. বশির গাজী বলেন, “প্রবল বর্ষণের কারণে কোথাও কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা তা আমরা খোঁজ নিচ্ছি। ক্ষতিগ্রস্ত হলে আর্থিক সহায়তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়মিত খাল-ড্রেন পরিস্কার না হওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং কার্যকর জলাবদ্ধতা নিরসন পরিকল্পনার অভাবেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ব্যবস্থা না নিলে দুর্ভোগ আগামীতে আরও বাড়বে বলেও মনে করছেন পরিবেশ ও নাগরিক অধিকারকর্মীরা।