আগামীকাল শুক্রবার খুলনায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘জুলাইযোদ্ধাদের পদযাত্রা’। রাজনৈতিক কর্মসূচি হলেও এতে নতুন মাত্রা পেয়েছে জনসম্পৃক্ততা ও চেতনার জাগরণ। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কর্মসূচি ঘিরে দেখা গেছে অভাবনীয় সাড়া। কেন্দ্রীয় নেতাদের সরাসরি অংশগ্রহণ এ কর্মসূচিকে দিয়েছে বাড়তি গুরুত্ব।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে খুলনা জেলার ৬৮টি ইউনিয়ন ও ৩১টি ওয়ার্ডে ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচারাভিযান শেষ করেছে দলটি । তরুণ-যুবা সমাজ, শিক্ষার্থী, স্থানীয় সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দ ও স্বেচ্ছাসেবকরা এসব কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
এনসিপির প্রচার ও প্রচারনা সেলের সদস্য সচিব এম সাইফুল বলেন, “এই সফর শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি একটি চেতনার জাগরণ। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো, তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে হৃদ্যতা গড়ে তোলার মাধ্যমে আমরা আমাদের অঙ্গীকার নবায়ন করছি।”
প্রতিনিধিদল খুলনায় রাতযাপন শেষে শনিবার সকালে সাতক্ষীরার উদ্দেশে যাত্রা করবে, যেখানে অনুষ্ঠিত হবে পরবর্তী ধাপের কর্মসূচি।
এ কর্মসূচিকে ঘিরে খুলনা নগরী ও আশপাশের এলাকায় তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরণের গণভিত্তিক পদযাত্রা বর্তমান প্রজন্মকে দেশপ্রেম, সংবেদনশীলতা ও দায়িত্ববোধে উদ্বুদ্ধ করবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আগামীকাল শুক্রবার (১১ জুলাই) খুলনায় ‘জুলাই পদযাত্রা’ নামে বর্ণাঢ্য গণসংযোগ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল শুক্রবার দুপুরে যশোর হয়ে খুলনায় পৌঁছাবে। যশোরে জুমার নামাজ আদায় শেষে তারা খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। খুলনায় এসে প্রথমেই শহীদদের কবর জিয়ারত করবেন তারা। এরপর একে একে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।বিকেল ৪টায় খুলনার শিববাড়ি মোড়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম পথসভা এবং সন্ধ্যায় দ্বিতীয় পথসভা হবে নগরীর পিপলস মোড়ে। এরপর চিত্রালী বাজার থেকে দৌলতপুর মোড় পর্যন্ত বর্ণাঢ্য পদযাত্রা ও গণসংযোগ হবে। পথসভা ও পদযাত্রায় তুলে ধরা হবে জনসাধারণের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া ও বর্তমান সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ে বক্তব্য।২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে স্মরণীয় করে তুলে, দলটি পরিবর্তনের বার্তা পৌঁছে দিতে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে খুলনার শিববাড়ি মোড় থেকেই স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়েছিল। সেখানে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক সংগ্রাম নতুন পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয় । এবার সেই সূত্র ধরে ‘জুলাই বিপ্লবীদের’ পুনর্মিলনী হবে শিববাড়ি মোড়ে, যেখানে গণতন্ত্রহীন শাসনের অবসান ঘটানোর মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ গঠনের সংকল্প পুনঃস্মরণ করা হবে । স্বাধীনতা, গুম-খুন ও গণহত্যার বিচারের দাবিসহ দলীয় ঘোষণাপত্র আলোচনার মাধ্যমে সামাজিক-রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়েও বক্তব্য থাকবে।
সেল ও সমন্বয় কমিটি কার্যক্রম সফল করতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৬টি সেল প্রচার, লজিস্টিক, নিরাপত্তা, সংবাদ সংযোজন, জনসংযোগ ও যুব-ছাত্র mobilisation গঠন করা হয়েছে । এছাড়া ২১ সদস্যের একটি ‘প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন সমন্বয় কমিটি’ও গঠন করা হয়েছে, যা পুরো আয়োজনে সমন্বয় ও তদারকি করবে । স্থানীয় সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্র-সমাজ ও স্বেচ্ছাসেবকরা এই সেলগুলোতে সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছেন।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের সমন্বয়ক সারজিস আলম, সামান্তা শারমিন, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী ও তাসনিম জারা সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ খুলনায় উপস্থিত থাকবেন। তারা পথসভা ছাড়াও শহীদদের কবর জিয়ারত ও আহত পরিবারের সঙ্গে সামান্য সময় কেটাবেন।
খুলনা জেলায় ৬৮টি ইউনিয়ন ও ৩১টি ওয়ার্ডে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং, প্যানা ফেস্টুনসহ রোডশো চালানো হয়েছে । তরুণ-ছাত্র সমাজ, স্থানীয় সাংগঠনিক নেতৃবৃন্দ এবং স্বেচ্ছাসেবকরা গণসংযোগে অংশ নিয়ে কর্মসূচিকে গতিশীল করে তুলছেন। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমেও প্রচার শুরু হয়ে গেছে, যা তরুণ প্রজন্মের সক্রিয়তা আরো বাড়িয়েছে।
প্রতিটি পথসভায় ২০,০০০–৩০,০০০ জন মানুষের অংশগ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে । স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যাপক জনস্রোত ও উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও যুব সমাজের মধ্যে। তাদের ধারণা, এই পদযাত্রা রাজনৈতিক সংস্কার ও গণতান্ত্রিক চেতনার পুনরুজ্জীবনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
স্থানীয় প্রশাসন পুলিশের পাশাপাশি কমিটির নিরাপত্তা সেল ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মোবাইল কোর্ট, বন্দোবস্ত দল ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে যাতে পদযাত্রা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি সেবা প্রদানে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে ।
দলের বক্তব্য এনসিপির প্রচার সেলের সদস্য সচিব এম সাইফুল বলেন,“এ সফর শুধু রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটা চেতনার জাগরণ; শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা, পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে হৃদ্য বন্ধন ঘেঁষে আমরা গণতন্ত্র রক্ষার অঙ্গীকার নবায়ন করছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “খুলনায় এ কর্মসূচি নতুন প্রজন্মের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও দেশপ্রেমের বাতাবরণ তৈরি করবে।”
শুক্রবার রাত খুলনায় অবস্থান করে শনিবার সকালে সাতক্ষীরাসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পদযাত্রার পরবর্তী অংশে যাওয়া হবে বলে জানা গেছে। পরবর্তী দিনের কর্মসূচিতে কিন্তু ভিন্ন সময়সূচী ও স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দলের অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তিতে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হবে।