/ কুয়েটের ২২ বছরের ইতিহাসে প্রথম বেতন-বোনাসবিহীন ঈদ

কুয়েটের ২২ বছরের ইতিহাসে প্রথম বেতন-বোনাসবিহীন ঈদ

ভিসি বিরোধী আন্দোলন করে বিপাকে শিক্ষক সমিতি

এম এ হাওলাদার : বিআইটি থেকে ২২ বছর আগে শুরু হয়েছিল খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের(কুয়েট) যাত্রা। এ পর্যন্ত কোনদিন বেতন-বোনাস বন্ধ থাকেনি। বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বেতন-বোনাসবিহীন ঈদ পালন করতে হচ্ছে কুয়েটের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। এতে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সমস্যা না হলেও হতাশা বিরাজ করছে কর্মচারীদের পরিবারে। কেননা সামান্য বেতনে চাকরী করা কুয়েটের প্রায় সাড়ে চারশ’ কর্মচারীকে চলতে হয় বেতনের অর্থ দিয়ে। অন্যদের বেতনের হার বেশি থাকায় তাদের থাকছে জমানো অর্থ। কিন্তু কর্মচারীদের এক মাস বেতন না হলে পরের মাসে চলতে হয় ধার-দেনা করে। মে মাস গিয়ে জুনে পড়লেও গতমাসের বেতন হয়নি শুধুমাত্র একক ক্ষমতা কুয়েটের প্রধান কর্তা তথা ভাইস চ্যান্সেলরের(ভিসি) হাতে থাকায়। গত ১৯ মে থেকে ভিসিহীন চলছে কুয়েট। ২২ মে থেকে পদত্যাগ করেন অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ হযরত আলী। শিক্ষক সমিতির আন্দোলনের মুখে ১৯ দিনের মাথায় কুয়েট ছেড়ে চলে যান নিজ কর্মস্থল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ে(চুয়েট)। আর এর ফলে একেবারেই অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে কুয়েট। শুধু অভিভাবকহীন নয়, বরং বেতন-বোনাসে স্বাক্ষর করার মতো কেউ নেই দেশের অন্যতম এ বিদ্যাপিঠটিতে।
কুয়েটের সূত্র বলছে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক ভিসিকে অব্যাহতি দেওয়ার পর শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে টিকতে পারেননি অন্তর্বর্তীকালীন ভিসিও। এখন ভিসি তাড়ানোর আন্দোলন করে অনেকটা বিপাকেই পড়েছেন শিক্ষকরা। বিশেষ করে সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মোঃ মাছুদের আমলে গঠন করা শিক্ষক সমিতিই সর্বশেষ সংকটের জন্য দায়ী এমনটিও দাবি করছেন কেউ কেউ। যে কারনে কুয়েট অফিসার্স এসোসিয়েশন, কুয়েট কর্মকর্তা সমিতি ও কুয়েট কর্মচারী সমিতির পক্ষ থেকে পর পর কয়েকদিন ভিসি নিয়োগ দিয়ে সংকট দূর করার আন্দোলন হলেও অনেকটাই নিশ্চুপ শিক্ষক সমিতি। কারণ তাদের আন্দোলনের মুখেই পদত্যাগ করতে বাধ্য হন অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ হযরত আলী।
এদিকে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে ঈদ-উল-আযহার বন্ধ হচ্ছে কুয়েট। এখনও বেতন-বোনাস হয়নি ১২শ’ শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর। বেতন-বোনাস না পাওয়ায় এবারের ঈদ আনন্দ ¤øান হতে যাচ্ছে কুয়েটের কর্মচারীদের।
গত ১৮ ফেব্রæয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করেই মূলত: ঘটনার সূত্রপাত হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা মনে করছেন রাজনীতিমুক্ত কুয়েটে আবারো ছাত্রলীগের আদলে হয়তো অন্য কোন ছাত্র সংগঠনের অনুপ্রবেশ ঘটতে যাচ্ছে। এজন্য বাঁধা দেওয়া হলেই বহিরাগতদের সাথে নিয়ে হামলা করা হয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর। ওই হামলায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয় এমনটিও দেখা গেছে ভিডিও ফুটেজে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, ওই হামলায় অন্তত: দেড়শ’ শিক্ষার্থী আহত হয়। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটিও গঠণ করা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যখন একদফায় রূপ নেয় এবং শেষ পর্যন্ত ২৫ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ভিসি ও প্রোভিসিকে অব্যাহতি দেয়। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে না পেরে কুয়েট শিক্ষক সমিতির ব্যানারে পাল্টা আন্দোলন শুরু হয়। যে কারণে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেমে গেলেও শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচারের দাবিতে শিক্ষক সমিতি ক্লাস বর্জনের ডাক দেয়। শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন শুরু করায় এক পর্যায়ে খুলনা ছাড়তে এবং পদত্যাগে বাধ্য হন চুয়েট থেকে আগত অধ্যাপক ও কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ হযরত আলী। সেই থেকে এখনও কুয়েট ভিসিবিহীন থাকায় কোনরূপ বেতন-বোনাসের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কেউ নেই। অর্থাৎ শিক্ষক সমিতির পাল্টা আন্দোলন অনেকটা গলার কাটায় পরিণত হয়েছে।
এজন্য সম্প্রতি ভিসি নিয়োগ করে দ্রæত সংকট সমাধানের দাবিতে কুয়েট অফিসার্স এসোসিয়েশন, কুয়েট কর্মকর্তা সমিতি ও কুয়েট কর্মচারী সমিতির পক্ষ থেকে একাধিক দিন মানব বন্ধন কর্মসূচি পালিত হলেও সেই আন্দোলনেও ছিলেন না শিক্ষকরা। আবার তাদের দাবি অনুযায়ী ভিসি পদত্যাগ করলেও এখনও ক্লাসে ফিরে যাননি শিক্ষকরা। অর্থাৎ আজ বুধবার পূর্ণ হতে যাচ্ছে কুয়েট শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনের ঠিক একমাস।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে গতকাল একাধিকবার ফোন দেওয়া হয় কুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ সাহিদুল ইসলামের মোবাইলে। কিন্তু মোবাইলটি রিসিভ হয়নি। হোয়াটসএ্যাপে ম্যাসেজ দিয়েও উত্তর মেলেনি।
কুয়েট কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ হাসিব সরদার বলেন, ‘কুয়েটের ইতিহাসে এই প্রথম বেতন-বোনাসবিহীন ঈদ করতে হচ্ছে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এটি ইতিহাসের পাতায় একটি কলংকজনক অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেলো। আমরা চেষ্টা করেছিলাম অন্তত: কর্মচারীদের বেতন-বোনাস হয়। কিন্তু হয়নি। ঈদের ছুটির পর বেতন-বোনাসের দাবিতে আবারো কর্মসূচি পালন করা হবে ইনশাআল্লাহ।’