দ্রুত নতুন ভিসি নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুয়েট) অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. হযরত আলীর পদত্যাগের এক দফা ঘোষণাসহ তার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন করেছে কুয়েট শিক্ষক সমিতি। গতকাল বুধবার দুপুরে সমিতির জরুরি সভা শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে এমনটি ঘোষণা দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ ফারুক হোসেন।
তিনি বলেন, ‘কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীণ ভিসি দায়িত্ব পালনে অক্ষম। কুয়েটের যে গাড়িতে তিনি (ভিসি) ঢাকায় গিয়েছেন সেই গাড়িটি ফেরত পাঠিয়েছেন। রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত দিয়ে ভিসির দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা জানিয়েছেন। সুতরাং এখন শিক্ষকদের একমাত্র দাবি তার পদত্যাগ। পাশাপাশি একজন যোগ্য ভিসি নিয়োগ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক’।
এদিকে, কুয়েটের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে আজ বৃস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে ক্যাম্পাসে মানব বন্ধন করা হবে বলেও জানান সমিতির সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, এখন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার দাবি ক্লাস শুরু করার। কিন্তু এমন অবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি কাউকে কিছু না জানিয়েই খুলনা ছেড়েছেন। প্রথমে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সংকট সমাধানের দাবি জানানো হয়। এরপর পরপর দু’দিন ২৪ ঘন্টা করে ৪৮ ঘন্টার সময় দিয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। কিন্তু এর মধ্যেই ভিসি কাউকে কিছু না বলে ক্যাম্পপাস ত্যাগ করেন গত সোমবার। এজন্য তৃতীয় দিনের মতো শিক্ষকরা গতকাল বুধবার দুপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন ছাড়াও জরুরি সাধারণ সভা করে ভিসির পদত্যাগের একদফা ঘোষণা করেছেন। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটা হতে পারেনা উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতির এই নেতা বলেন, যিনি পারবেন তাকে এখানে দায়িত্ব দেওয়া হোক। এই মুহূর্তে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন ভিসির পদত্যাগই একমাত্র দাবি উল্লেখ করে তিনি সরকারের কাছে দ্রæততম সময়ের মধ্যে নতুন ভিসি পদায়নের দাবি জানান।
এর আগে টানা ৭৫ দিন বন্ধ থাকার পর গত ৪ মে কুয়েটের ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচার চেয়ে শিক্ষকরা ক্লাস বর্জন শুরু করেন। ৫ মে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা শেষে সাত কর্মদিবসের আলটিমেটাম দিয়ে তাদের দাবিতে অটল থাকেন শিক্ষকরা। পক্ষান্তরে ১৮ ফেব্রæয়ারি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের সহায়তায় বহিরাগতদের হামলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনা এবং শিক্ষকদের সাথে সকল প্রকার অনাকাংখিত ঘটনার জন্য তিন দফা খোলা চিঠি দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও দ্রæত ক্লাস শুরুর দাবি জানান। কিন্তু এরই মধ্যে কুয়েট প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩৭জন শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরাও ফুঁসে ওঠে। কিন্তু শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত থাকার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরাও অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। সর্বশেষ গত সোমবার(১৯ মে) ও মঙ্গলবারের(২০ মে) শিক্ষকদের সাথে কুয়েটের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এক হয়ে দ্রæত ক্লাস শুরুর দাবি জানান। কিন্তু সোমবার(১৯ মে) সকালেই খুলনা ত্যাগ করেন অন্তর্বর্তীকালীন ভিসি অধ্যাপক ড. হযরত আলী। খুলনা ত্যাগের আগে তিনি কুয়েটের বিজ্ঞান ও মানবিক অনুষদের ডীন এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদকে বিষযটি জানিয়েছিলেন। কিন্তু গতকাল বুধবার পর্যন্ত তার ওপর কোন দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। বরং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের কথা অনুযায়ী রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আনিছুর রহমান ভুঞার কাছে ভিসি লিখিত দিয়ে দায়িত্ব পালনের অপারগতার কথা জানিয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে রেজিস্ট্রার কোন মন্তব্য করেননি। বরং তাকে গতকালও (বুধবার) মোবাইলে পাওয়া যায়নি।