/ কুমিল্লায় দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়নি এখনো

কুমিল্লায় দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়নি এখনো

কুমিল্লার মুরাদনগরে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন ডেকে মা ও দুই সন্তানকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পার হলেও এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি।

তবে পুলিশের ভাষ্যমতে, নিহত রুবির পরিবারের ঘটনার পর থেকে কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের খোঁজা হচ্ছে। দুপুরের মধ্যে হয়তো পরিবারের লোকজন থানায় মামলা করবে।কেউ না এলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে।শুক্রবার বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান এসব তথ্য জানান।

এদিকে শুক্রবার দুপুরে কড়ইবাড়ি এলাকায় সরেজমিন দেখা গেছে, কড়ইবাড়ি গ্রাম ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। জনশূন্য হয়ে পড়েছে গ্রামগুলো।এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। রুবির বাড়িতে কুমিল্লা পুলিশ লাইন থেকে একদল সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।কড়ইবাড়ি বাজার মসজিদ গিয়ে দেখা গেছে, মুসল্লির সংখ্যা একেবারেই কম। যারা নামাজে এসেছেন তাদের মধ্যে কয়েকজন মুসল্লি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গতকালকের ঘটনার পর এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।

এলাকার পুরুষরা মামলা ও ঢালাও গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে গেছে। তাই মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা কম। রুবির বাড়ির ভাড়াটে মোসা. রহিমা বেগম বলেন, ‘গতকালকের ঘটনায় এখনো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সারা রাত পুলিশ ছিল। এখনো বাড়িটি পুলিশি পাহারায় রয়েছে।রহিমা বেগম আরো বলেন, ‘রুবির পুরো পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত। আমি নিজেও এই বাড়িতে থেকে অনেকবার চলে যেতে চেয়েছিলাম। যখন আমি রুবি বেগমকে বলতাম, বাড়ি ছাড়ব তখন সে আমার কাছে এক লাখ টাকা দাবি করত। সে নাকি আমার কাছে টাকা পেত। আমি গরিব মানুষ। অত টাকা দেব কোথায় থেকে। তাই আমি তার বাড়ি ছাড়তে পারি নাই।’

ঘটনার বিবরণ সম্পর্কে রহিমা বেগম বলেন, ‘ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গ্রামের কয়েকশ লোক রুবি বেগমের বাড়ির ঘিরে ফেলে। তখন আমি বাড়িতে ছিলাম। আমার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বাড়ির ছাদে কোনো রকমে আত্মগোপন করি। পরে আমার স্বামীকে ফোন করলে শেষে আমাকে নিচে নামায়। নিচে নেমে দেখি, সিঁড়ির গোড়ায় রাসেলের মৃতদের পড়ে আছে। বাড়ির উঠানে রুবি বেগমের মৃতদেহ। আমরা দ্রুত বের হওয়ার পর রাস্তার দোকানের পাশে দেখি, জোসনার মৃতদেহ পড়ে আছে। আমরা কোনো রকম জীবন নিয়ে বের হই। ছোট মেয়ে রুমাকে লোকজন ধরে হাসপাতালে নেন। এখন সে বেঁচে আছে কিনা আমি জানি না।’

বাঙ্গরা বাজার এলাকার ব্যবসায়ী রাহাত নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘মারা যাওয়া তিনজনের দাফন কোথায় হবে তা এখনো কেউ জানে না। এই এলাকার কবরস্থানে দাফন ব্যবস্থা হবে কিনা, এলাকাবাসী দেবে কিনা তা বলতে পারছি না। তবে মনে হচ্ছে না, এলাকাবাসীর কেউ তাদের এ এলাকায় দাফন করতে দেবে।’ এদিকে, আজ দুপুর ২টার দিকে ৩ জনের মরদেহের ময়নাতদন্ত কাজ শেষ হয়েছে। এখন এসব মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। তবে মরদেহ কার কাছে হস্তান্তর করা হবে তা জানা যায়নি। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (কুমেক) ফরেনসিক বিভাগ থেকে এসব সূত্রে জানা গেছে।গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে এলাকাবাসী একটি মোবাইল ছিনতাই ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ তুলে মা ও তার ২ সন্তানকে পিটিয়ে হত্যা করে।

নিহতরা হচ্ছেন, ওই গ্রামের জুয়েল মিয়ার স্ত্রী রোকসানা আক্তার রুবি (৫৮), তার ছেলে ছেলে মো. রাসেল (৩৫) ও মেয়ে জোনাকি আক্তার (৩২)। হামলায় আহত হয়েছেন রুবির আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৫)। তাকে শঙ্কটাপন্ন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (কুমেক) ভর্তি করা হয়েছে।

বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা আছে।’